সব যানবাহনের চাপ কমিয়ে ৮৫ শতাংশ সময় বাঁচাবে

Reported By: খাদিজা আক্তার Posting Time: 2023-12-10 03:48:10 Catagory: Commentary
news portal for bangladesh
পাতাল রেলের যুগে বাংলাদেশ

মেট্রোরেল এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা। মেট্রোরেল এমআরটি-৬-এর মধ্য দিয়ে উত্তরা ও মিরপুরবাসী আধুনিক রেল যোগাযোগের সুবিধা ভোগ করছে। সরকারের পরিকল্পনা ২০৩০ সালের মধ্যে পুরো ঢাকা শহরকে মেট্রোরেলের আওতায় নিয়ে আসা। এ পরিকল্পনার অংশ হিসাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্মাণকাজ উদ্্বোধনের মধ্য দিয়ে পাতাল রেলের যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ; এটি হবে দেশের দ্বিতীয় মেট্রোরেল এমআরটি-১। দ্বিতীয় মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ ২০২৬ সালের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এটি চালু হলে ১০০ সেকেন্ড পরপর ট্রেন চলাচল করবে। এই রেল নির্মাণকাজের বাস্তবায়ন করছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
ডিএমটিসিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক জানিয়েছেন, এই পাতাল রেলের ফলে বিমানবন্দর রুটে যাতায়াতকারীদের প্রায় ৮৫ শতাংশ সময় বাঁচানোর পাশাপাশি বাস ও অন্যান্য যানবাহনের চাপও কমানো সম্ভব হবে। তিনি জানান, দ্বিতীয় মেট্রোরেল হবে উড়াল ও পাতালের সমন্বয়ে। দুটি রুটে ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন-১ নির্মাণ করা হবে। আর এতে খরচ হবে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪০ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। বাকি ১২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা খরচ করবে বাংলাদেশ সরকার। ২০২৬ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
২০১৮ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ের এক সমীক্ষায় দেখা যায়, এমআরটি লাইন-৬ পুরোপুরি চালু হলে মেট্রোরেল পরিচালনাকালে দৈনিক ভ্রমণ খরচ বাবদ প্রায় ৮ কোটি ৩৮ লাখ এবং যানবাহন পরিচালনা খরচ বাবদ প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা সাশ্রয় হবে। অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, এ সাশ্রয়কৃত অর্থ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে, জিডিপি বাড়বে।
এদিকে মেট্রোরেলের মতো পাতাল রেলপথ নির্মাণে জনগণের ভোগান্তি হবে না বলে জানিয়েছেন ডিএমটিসিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি বলেন, এমআরটি লাইন-১ চালু হলে এই রুটে প্রতিদিন ৮ লাখ যাত্রী চলাচল করতে পারবেন। বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর যেতে সময় লাগবে ২৪ দশমিক ৩০ মিনিট। আর নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল যেতে সময় লাগবে ২০ দশমিক ৩৫ মিনিট। এমআরটি লাইন-১-এর প্রতিটি পাতাল স্টেশন হবে তিন তলাবিশিষ্ট। টিকিট কাউন্টার ও অন্যান্য সুবিধা থাকবে প্রথম বেজমেন্টে। প্ল্যাটফরম থাকবে দ্বিতীয় বেজমেন্টে। আর উড়াল স্টেশনের টিকিট কাউন্টার এবং প্ল্যাটফরম থাকবে তৃতীয় তলায়। যাত্রীদের চলাচলের জন্য উড়াল ও পাতালÑদুই পথের স্টেশনেই থাকবে লিফট, সিঁড়ি ও এস্কেলেটর সুবিধা। স্টেশনগুলোয় পর্যাপ্ত বাতাস ও অক্সিজেনের প্রবাহ ঠিক রাখতে থাকবে অতিরিক্ত ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা।
ডিএমটিসিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক বলেন, এমআরটি লাইন-৬-এ সাড়ে ৩ মিনিট পরপর ট্রেন চলতে পারে। এটিকে আমরা আরও কমিয়ে আনতে পারব। অন্যদিকে এমআরটি লাইন-১-এ ১০০ সেকেন্ড দিয়ে শুরু করব। এটাকে হেডওয়ে বলে। ১০০ সেকেন্ডের মধ্যে একটার পর একটা ট্রেন আসবে, এটি আর কমানোর সুযোগ নেই। আমরা ৬টি কোচ দিয়ে এমআরটি লাইন-৬ শুরু করেছি এবং আরও দুটি কোচ সংযোজনের সুযোগ রেখেছি। অর্থাৎ এটি ৮টিতে উন্নীত করা যাবে। এমআরটি লাইন-১ শুরুই হবে ৮টি কোচ দিয়ে। এখানে কোচ বৃদ্ধি করার বিষয়টি আর প্রয়োজন হচ্ছে না। আন্তর্জাতিকভাবে ৮টি কোচ দিয়ে শুরু করে আমরাও ৮টি কোচ দিয়ে শুরু করব।
প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার অংশ ভূগর্ভস্থ হবে এবং নতুনবাজার থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত ১১ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার হবে উড়াল। কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর যেতে সময় লাগবে ২৪ মিনিট। বিমানবন্দর রুটে ১২টি এবং পূর্বাচল রুটে ৯টি স্টেশন থাকবে। পূর্বাচল রুটের নর্দা ও নতুনবাজার স্টেশন থাকবে ভূগর্ভে এবং এই দুটি স্টেশন যাত্রীদের রুট পরিবর্তনের জন্য একটি ইন্টারচেঞ্জ হিসাবে ব্যবহার করা হবে।
এদিকে ২০১৮ সালে পরিচালিত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ওই সমীক্ষায় দেখা যায়, ঢাকা শহরের যানজটের জন্য বার্ষিক ৪.৪ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়, যা জাতীয় বাজেটের ১০ শতাংশের বেশি। ২০২০ সালের বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনেও আর্থিক ক্ষতির তথ্যটি উঠে এসেছে। তাদের তথ্যানুযায়ী ঢাকা মহানগরীতে যানজট এবং এর প্রভাবে বার্ষিক প্রায় ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি হচ্ছে।
নষ্ট কর্মঘণ্টার মূল্য বিবেচনায় নিলে ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপক আকার ধারণ করে, যা জাতীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে। ঢাকার যানজট ৬০ শতাংশ কমাতে পারলে বাংলাদেশ ২.৬ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করতে পারে।
অথচ এই পাতাল রেলের ফলে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুরে যেতে সময় লাগবে মাত্র ২৫ মিনিট। ফলে এই রুটে প্রায় ৮৫ শতাংশ সময় বাঁচানো যাবে। আর পাতাল রেলের প্রভাবে কমে যাবে বাস ও অন্যান্য যানবাহনের চাপও।
বিমানবন্দরে প্রতিদিন ১৫০টি ফ্লাইটে ২২ হাজার যাত্রী ওঠানামা করেন। অনেক সময় কাক্সিক্ষত ফ্লাইট ধরতে প্রবাসীরা একদিন আগেই উপস্থিত থাকেন। অনেকেই জ্যামের কথা ভেবে আগেই রওয়ানা হন। তবে পাতাল রেল চালু হলে বিমানবন্দরের ফ্লাইটের জন্য নির্দিষ্ট সময়েই উপস্থিত হতে পারবেন যাত্রীরা। আন্তর্জাতিক রুটে চলাচলকারী যাত্রীদের ভোগান্তি কমবে।
পিআইবি ফিচার